মো: অহদিুর রহমান, মনপুরা :
ভোলার মনপুরায় নি¤œচাপ, ঝড়ো বাতাস ও পূর্ণীমার প্রভাবে মেঘনার পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৯২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়ে ৫-৬ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল সহ মূল ভূখন্ডের বেড়ীর ভিতরে ও বাহিরে বিস্তৃর্ন অঞ্চল। এতে গত ৫ দিন ধরে ১০ গ্রামের আনুমানিক ২০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি অবস্থার মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়াও উপজেলা সদরে সীট্রক ঘাট এলাকায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এতে করে উপকূল জুড়ে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কায় আতংক বিরাজ করছে।
রোববার দুপুর ৩ টায় মেঘনার পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২ এর উপসহকারি প্রকৌশলী আবদুর রহমান। তিনি জানান, বিপদসীমার সর্বোচ্চ উচ্চতায় মেঘনার পানি প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল সহ চরাঞ্চলে ৫-৬ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়।
এদিকে মনপুরা উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন সদ্য নতুন ইউনিয়ন কলাতলীর অধিকাংশ এলাকা আনুমানিক ৬ ফুটের ওপরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন ইউপি সদস্য আবদুর রহমান।
তিনি জানান, দিনে-রাতে দুবেলা জোয়ারে পানিতে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়। এতে করে জোয়ারের পানি ঘরে প্রবেশ করে। তখন পানি থেকে বাঁচতে কেউ খাটের ওপর, আবার অনেকে জলোচ্ছ্বাস মনে করে ঘরের টিনের চালের ওপর আশ্রয় নেয়।
এছাড়াও মনপুরা থেকে বিচ্ছন্ন চরনিজাম, ঢালচর, চর শামসুদ্দিন ও বদনার চর জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই সমস্ত চরাঞ্চলে বসবাসরত ২০ হাজারের ওপরে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সবাইর মধ্যে জলোচ্ছ্বাসের আতংক ছড়িয়ে পড়ে বলে মুঠোফোনে জানান একাধিক ব্যক্তি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট গ্রাম জোয়ারে প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে। ওই গ্রামের প্রত্যেকটি ঘর ও মসজিদে পানি প্রবেশ করেছে। গত ৫ দিন ধরে ওই এলাকার মানুষ রান্না করতে না পারায় অর্ধহারে অনাহারে দিন যাপন করছে। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের চরযতিন, সোনারচর, চরজ্ঞান, চরফৈজুদ্দিন গ্রামের দক্ষিণ মাথা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এদিকে উপজেলা সদরে সীট্রাক ঘাট এলাকায় জোয়ারে প্লাবিত হয়।
অপরদিকে উপজেলার ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের কূলাগাজী তালুক, আন্দিরপাড়, পশ্চিম আন্দিরপাড়, ঈশ্বরগঞ্জ ও কাউয়ারটেক ঢাকাগামী লঞ্চ ঘাট এলাকা ৫-৬ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়। পাশাপাশি উপজেলার ৩ নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আলমনগর ও উত্তর সাকুচিয়া গ্রামের মাষ্টারহাট এলাকার পশ্চিম পাশ জোয়ারে প্লাবিত হয়। এই সমস্ত এলাকার বাসিন্দারা গত ৫ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
দুর্গত এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, গত ৫ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় অর্ধহারে-অনাহারে দিনযাপন করছি। তবে আজ (রোববার) সবচেয়ে বেশি পানি হয়। এতে তারা জলোচ্ছ্বাস হয়েছে মনে করে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
তারা আরও জানায়, ভাটায় পানি নেমে যাওয়ার পরক্ষনে ফের জোয়ারে পানি ওঠে। এতে তারা দিনে-রাতে পানিবন্দি অবস্থায় থাকে। কোনমতে শুকনো খাবার খেয়ে জীবনযাপন করছে। সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবী করেন তারা।
এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর উপসহকারি প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, মেঘনার পানি সর্বোচ্চ উচ্চতায় ৯২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হওয়ায় ৫-৬ ফুট জোয়ারে নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চল প্লাবিত হয়।
এই ব্যাপারে হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার ও মনপুরা ইউপি চেয়ারম্যান আমানত উল্লা আলমগীর জানান, মূল ভূখন্ডের ভিতরে ও বাহিরে জোয়ারে প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারিভাবে সাহায্য ও সহযোগিতার দাবী করেন তারা।
এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলার দায়িত্বে থাকা চরফ্যাসন উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল-নোমান জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।