লেখক-আবদুর রব মাস্টার
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
“বাঙ্গালীর স্বপ্ন, বাঙ্গালীর আশা”
আলহামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসার মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। আমাদের মাতৃভূমি আমাদের অহংকার। আমাদের মাতৃভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের রুপ ও রসে মুগ্ধ বিশ্ববাসী। এখানের নদ নদী, খাল বিল, চিল সোনালী ফসল, রাখালের বাশি, কৃষকের হাসি, জেলেদের ভাটিয়ালী সর্বোপরি পদ্মার ইলিশে বাড়িয়েছে এ দেশের শান ও মান। তাই কবি জীবনানন্দ বাংলাদেশ কে আখ্যায়িত করেছেন রুপসী বাংলা হিসাবে। এখন কবির জীবদ্দশার বাংলাদেশ আর নেই। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে সাথে ক্রমাগত অবকাঠামোগত উন্নয়নের সংমিশ্রনে বাংলাদেশ এখন আপরুপা রুপে সজ্জিত। মনে হয় প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের লীলাভূমি এখন নববধুর রুপ ধারণ করেছে ।
এ দেশের যে দিকে চোঁখ যায়, দেখতে পাবো অবকাঠামোগত উন্নয়নের জোয়ার। প্রতি উপজেলায় বহুতল বিশিষ্ট প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, টেকনিক্যাল কলেজ ও ৪তলা বিশিষ্ট নায়নিভিরাম মসজিদ। এমনকি এদেশের নিভৃত পল্লীতে ও আছে পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ, খেলার মাঠ, পুল, কালভার্ট, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি। উপজেলা পর্যায়ে থানা ভবন, উপজেলা ভবনসহ একাধিক ভবন এবং জাতীয় পর্যায়ে মেট্রো রেল, কর্নফুলী টানেল, গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতার বাড়ী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিরল সৌন্দয্যের পূর্বাচল এক্সপ্রেস ওয়ে, সর্বোপরি স্বপ্নের পদ্মা বহুমূখী সেতু।
পদ্মা নদীকে নিয়ে আছে কবি লেখক ও সাহিত্যিকদের বিবিধ কবিতা, গান, গল্প ও প্রবন্ধ। আছে শিল্পী আব্বাসউদ্দিন, আবদুল আলীম ও ফেরদৌসী মজুমদারের অসংখ্য সুরেলা কন্ঠের গান। পদ্মার ইলিশ দুর্লভ স্বাদের মাছ। নাম শুনলেই অনেকের জিবে জল এসে যায়। ভোজন রসিক মাত্রই এর কদর জানেন। খুব সম্ভবত ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন কমনওয়েলথ এর প্রতিনিধি ষ্টিফেন নিনিয়ান। রাস্ট্রীয় অতিথি ভবনের খাবারে পদ্মার ইলিশের স্বাদ পেয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন ‘‘ পৃথিবীতে এমন স্বাদের মাছ আছে তা পূর্বে কখনও জানতেন না”। দেশে ফেরার সময় তিনি টিন ভর্তি পদ্মার ইলিশ সাথে করে নিয়ে যান।
এবার পদ্মা মানব কল্যানে বিলিয়ে দিল তার বুক। পদ্মার বুক চিরে ক্ষত বিক্ষত করে, পেরেক মেরে, নির্মিত হলো ৬.১৫ কিলোমিটার পৃথিবীর ১১ তম দীর্ঘ দ্বিতল পদ্মা সেতু। উপর তলায় চলবে দুই, তিন, চার, ছয় ও আট চাকার মোটরযান। নিচ তলায় সংরক্ষিত আছে। কবি শামসুর রাহমানের “ট্রেন” কবিতার লাইনে উল্লেখ করছি-
ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলছে
রাত দুপুরে ঐ।
ট্রেন চলছে, ট্রেন চলছে
ট্রেনের বাড়ী কই?
পদ্মার জলে ইলিশসহ বিভিন্ন জাতের মাছ, পদ্মার জলের দুই পাড়ের সোনালী ফসল, তাই প্রবাদে আছে মাছে ভাতে বাঙ্গালী। দ্বিতল সেতু কোলে তুলে পদ্মার পরিচিতি বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়ল। দেশে দেশে হিসেব কষা শুরু হয়ে গেল ———-কে কত উপকৃত হবেন? কার কত সময় বাঁচবে? সূধীমহলের ধারণা পরিবহন মালিকগনের যাত্রী বাড়বে ৬০%, বিপনী বিতানে খদ্দের বাড়বে ৫০%, পন্য বিক্রি বাড়বে ৪০%, ভরতীয় হাসপাতালে বাংলাদেশের রোগী বাড়বে ৮০%। সাগর কন্যা কুয়াকাটায় পর্যটক বাড়বে ৭৫%, এছাড়া ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার পন্য বিক্রির প্রসার ঘটতে পারে ৫০%।
আমরা ভোলা জেলাবাসী আমাদের হিসেবের মিলটা ওই ভাবে বাড়ছে না। কারণ ভোলা দ্বীপের সাথে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ নেই। ভোলার উন্নয়নে ৩টি সেতু অপরিহার্য, ১) ভোলা বরিশাল সেতু ২) ভোলা লক্ষীপুর সেতু ৩) লালমোহন কালাইয়া সেতু। তবে আশার কথা হলো ভোলার ভেদুরিয়া টু বরিশালের লাহারহাটে প্রায় ১০ কিলোমিটার একতলা সেতুর কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়েছে।
ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য দ্বীপবন্ধু আলহাজ্ব নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন মহোদয় একজন অতিথি পরায়ন মানুষ। যিনি প্রতি বছর ঈদের সময় হাজার হাজার মানুষের মেহমানদারী করেন। ভোলা জেলায় এ ধরনের বিশাল খাওয়ার আয়োজন অতীতে কোন দিন কেহ করেছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই।তিনি এলাকার উন্নয়নে অনবরত লালমোহন-তজুমদ্দিনের গ্রামগঞ্জ চষে বেড়ান। সম্প্রতি তিনি লালমোহনের নাজিরপুর টু কালাইয়া রুটে যাত্রী পারাপারে ফেরী ব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা মাননীয় সংসদের এই দরদী কাজের জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই। আশা করি তিনি ভবিষ্যতে নাজিরপুর টু কালাইয়া রুটে সড়ক সেতু নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
পদ্মা বহুমূখী সেতু একটি ব্যায়বহুল স্থায়ী স্থাপনা। সরকার পরিবর্তনশীল। যুগে যুগে দেশে দেশে সরকার আসবে——–যাবে। কিন্তু স্থাপনা স্থায়ীভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। তবে পাঠ্যপুস্তুকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে পদ্মা সেতু নির্মানের ইতিহাস।
পদ্মা সেতুরমত দৈত্যাকৃতির মেঘা প্রকল্প হাতে নেয়ার সাহস বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা ও ইচ্ছা শক্তির ফলেই সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ কে বলা হয় ১২ আউলিয়ার দেশ, সুফী সাধকের দেশ, পীর মাশায়েখের দেশ, আলেম ওলামার দেশ, বহু আল্লাহ প্রেমিক ঘুমিয়ে আছেন এই মাটিতে। বহু আল্লাহওয়ালা এখনও দ্বীনধর্ম প্রচারে জীবন উৎসর্গ করতেছেন। বড়বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে এই সরকারের সফলতার পিছনে তাঁদের ও নেকনজর আছে বলে আমরা মনে করি।
পদ্মা বহুমূখী সেতু সকল জনগনের সেতু। জনগনের কল্যানেই এ সেতু নির্মিত। এ সেতুর শতভাগ সুবিধা এ দেশের জনগনই ভোগ করবেন। অতএব জনগনেরও কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে, দলমত নির্বিশেষে আমরা এ দেশের সাধারণ জনগণ সেতুর স্থায়ীত্ব রক্ষায় মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থণা করবো। আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে শোকরিয়া আদায় করবো। আলহামদুলিল্লাহ।
যদি সম্ভব হয় আগামী ২৪শে জুন শুক্রবার জুমআর নামাজে সকলে মিলে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করবো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিলে আয়োজন সহজতর হবে।
“আমিন। ছুম্মা আমিন”
ধন্যবাদান্তে, লেখক-আলহাজ্ব আবদুর রব মাস্টার, সভাপতি, উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, লালমোহন, ভোলা।
(এই প্রবন্ধটি লেখার সময় আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন আমার বন্ধু সাংবাদিক জনাব মোঃ জাহিদুল ইসলাম দুলাল, সদস্য, উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, লালমোহন, ভোলা। আমি তার নিকট কৃতজ্ঞ।)