শিমুল চৌধুরীঃ
উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জনসাধারণ।
ভোলার সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ভোলার করোনা ল্যাবে ৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন আরো ২৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে এ জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ১৮৫। করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের।
এদিকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং লোকসমাগম কমাতে সরকার সারাদেশে আজ থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে।
কিন্তু আজ এক সপ্তাহের লকডাউনে দ্বীপ জেলা ভোলায় কমেনি লোকসমাগম। হাট-বাজার ও সড়কে চলাচলরত পথচারীদের অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করলেও মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। আজ সোমবার দিনব্যাপী সদর উপজেলার সদর রোড, চক বাজার, কাঁচা বাজার, মাছ বাজার, উকিল পাড়া, যুগিরঘোল এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও কমেনি মানুষের চলাচল। ভোলা-চরফ্যাশন রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও অবাধে চলাচল করেছে রিকসা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস।
সকাল থেকেই শহরের যুগিরঘোল চত্বরে দেখা গেছে, প্রায় ১৫/১৬টি রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার জটলা। এসব বাহন দিয়ে মানুষ সদর রোডে যাচ্ছেন। করছেন কেনাকাটা। যুগিরঘোল এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে অনেক সময় বাধা পেলে বিকল্প সড়ক দিয়ে সদর রোডে যাতায়াত করছে রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো।
সদর রোড, চকবাজার ও কাঁচা বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও রয়েছে মানুষের চলাচল।
বেলা ১২টার দিকে মাছ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। সেখানে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। সেখানে অধিকাংশ ক্রেতারা মুখে মাস্ক ব্যবহার করলেও অনেক বিক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
মাছ বাজারে কথা হয় মাছ বিক্রেতা আব্দুল কাদির ও মোসলেহ উদ্দিনের সাথে। তারা বলেন, বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশী হলেও বেচা-কেনা কম। তারা আরো বলেন, একদিকে চলছে নদীতে অভিযান। অন্যদিকে চলছে লকডাউন। তাই কেনা-বেচা কম।
পুস্তক ব্যবসায়ী প্যারাডাইস বুক ডিপোর সত্বাধিকারী মাহবুব মোর্শেদ বাবুল বলেন, লকডাউনে পুস্তক ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভোলা জেলা বাস ও মিনিবাড মালিক সমিতির সম্পদ আবুল কালাম বলেন, মানুষকে ঘরে রাখতে যে লকডাউন দেওয়া হয়েছে তা মূলত কার্যকর হচ্ছে না। কারন, লকডাউনে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাসে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রী আনা নেওয়া করা হচ্ছে। শহরে প্রচুর মানুষ চলাচল করছে। অথচ শুধুমাত্র বাস বন্ধ করে কোন লাভ হবে না বলেও মন্তব্য করপন তিনি।
এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বলেন, ভোলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে স্বাস্থ্য বিভাগ কঠোর হচ্ছে। এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে।
অপরদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মাস্ক পরতে আজ সকালে অভিযানে নেমেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট ইউছুফ হোসেনপর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত সকালে সদর রোডে অভিযান চালিয়ে মাস্ক না পরায় ৭ জনকে ৩ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
এ ছাড়া বিকেলে নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেটরা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা মাঠে তাূের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে জনগনকে আরে সচেতন হয়ে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।