আকতারুল ইসলাম আকাশ: আমার ছোটবেলা। যখন আমি প্রাথমিক ছেড়ে মাধ্যমিক স্তরে উঠেছিলাম। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি জ্ঞান হচ্ছে আর বুঝতেছি সবকিছু। স্কুল জীবনে যখন পড়াশোনা করছি। তখন প্রায়ই আড্ডা দিতাম বাজারে। কারণ আমাদের বাড়ি বাজারের খুবই নিকটে। তাছাড়া আমার বাবার ব্যবসা রয়েছে বাজারে। তাই ছোটবেলায় বাবা নামাজের সময় দোকানে আমাকে রেখে নামাজ পড়তে যেতেন। তাই বাজারে আমার আড্ডাটা ছিলো বেশি। আর আমার বাজে আরেকটা অভ্যাস ছিলো টিভি দেখা। তখন তো আর এতো টিভি চ্যানেল ছিলোনা। সাদাকালো টিভিতে বিটিভি দেখতাম। প্রতি বৃস্পতিবার আর শুক্রবারে বিটিভিতে ছায়াছবি চলত। ছবি আর খবরগুলো দেখা হতো বেশি। তখন সবাই খবর দেখত বেশ মনোযোগ দিয়ে। একটা বিষয় তখন খুব খেয়াল করতাম। খবরে কোনদিন যদি ভোলা-১ আসনের এমপি জননেতা আলহাজ্জ্ব তোফায়েল আহমেদকে দেখাত। তখন টিভির সামনেই অনেকেই বলে উঠতো ‘এই যে তোফায়েল আহমেদ’। তখন ভাবতাম তোফায়েল আহমেদ কে। কি করে তিনি। টিভিতে তাকে দেখা যায় কেনো। আর তাকে দেখলেই বা সবাই কেনো হৈচৈ করে উঠে।
একদিন রাত ৮টার খবর চলছে। আমিসহ টিভির সামনে অনেকেই খবর দেখছি। আমি ছোট থাকায় মুরব্বিরা আমাকে মাটিতে বসতে বলত। তাই মাটিতে বসে বসে টিভি দেখতাম। সেইদিন সেই খবরে তোফায়েল আহমেদকে অনেক সময় ধরে দেখা গিয়েছিলো। দেখেছিলাম তিনি একটা বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন। সেইদিন টিভিতে একটু বেশি সময় ধরে তাকে দেখানোর কারনে ভালোভাবে তাকে দেখলাম। খবর শেষে এক চাচাকে বলেছিলাম চাচা তোফায়েল আহমেদ কে ও.! চাচা বলল তোফায়েল আহমেদ ভোলার রাজা। আমার ধারণা আমি তখন এমপি মন্ত্রী বুঝবোনা বিদায় তিনি রাজা হিসেবে আমাকে চিনিয়েছেন। তখন বুঝতাম ভোলার রাজা তোফায়েল আহমেদ।
একদিন আমাদের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে আমাদের স্কুল মাঠে তিনি আসবেন বলে শুনেছিলাম। দুপুরের দিকে দেখলাম কিছু লোক স্কুল মাঠে লাল রঙের প্যান্ট ও লাল রঙের গেঞ্জি গায়ে দিয়ে ঢোল পিঠাচ্ছি ও অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে। আমি তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। হঠাৎ একটা সাদা রঙের গাড়ি আসল ( যাকে আমি জিপ গাড়ি বলতাম)। গাড়িটা আসার সাথে সাথে পুলিশ আমাদেরকে সরিয়ে দিলো। যুবকেরা মুরব্বিরা আমাদেরকে ঠিলে সরিয়ে দিলো। তখন স্কুলের পিছন হয়ে বাগানের মধ্য দিয়ে একটি সুপারি বাগানে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। যেখান থেকে তোফায়েল আহমেদকে দেখা গিয়েছিলো।
উচ্চ ক্লাসে উঠে যখন উচ্চ বই পড়তে লাগলাম। তখন খোঁজে পেলাম বঙ্গবন্ধুর নামসহ অনেক নেতাকর্মীর নাম। বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ বিষয়ে পড়তে গিয়ে আস্তে আস্তে জানতে পারলাম যতসব কাহিনী।
আর যতই বড় হচ্ছিলাম। ততই জানতে পারছিলাম তোফায়েল আহমেদের সম্পর্কে। ছোটবেলায় তাকে যেমন বীর মনে হতো মানুষের মুখ থেকে শুনে। এখন বড় হয়ে ঠিক তাকে তেমন বীরই দেখছি। এই ভোলাকে একমাত্র তোফায়েল আহমেদের ভোলা নামেই চেনে সবাই। ভোলার যত উন্নয়ন হয়েছে সব তার কল্যাণেই হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর এখন পর্যন্তু এই দ্বীপ জেলা ভোলাকে সবাই তোফায়েল আহমেদের ভোলা নামেই চেনে। আর ছোটবেলায় আমিও চিনেছি তোফায়েল আহমেদ দ্বীপের রাজা।
লেখক: সাংবাদিক আকতারুল ইসলাম আকাশ